পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ কারণে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমানসহ সাত কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে আনা হয়েছিল বলে দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মারা যাওয়ার ঘটনায় র‌্যাবকে দায়ী করে বর্তমান পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমদসহ সাতজনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

শনিবার সকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, রাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আমাকে ফোন করলেন এবং জানালেন যে, বাইডেন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটা নতুন নিয়ম করেছে।

র‌্যাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এমন একটি ডিসিপ্লিনড … তাকে তারা লিসটেড করেছে, ওখানে যারা কাজ করে হেড অব দি ইন্সটিটিউশন, তাদেরও তারা স্যাঙ্কশন করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আর এখানে নতুন এক ঢং বের হল- হেড অব দি ইন্সটিটিউশন, তাকে কী করে… এগুলো খুব দুঃখজনক।

এই খবর জানার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনা হয়েছিল, আমার পররাষ্ট্র সচিব উনার সাথে আলাপ করেছেন। উনিও অনেকটা সারপ্রাইজডের মতো। এখন দেখি আর কী হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এতে সম্পর্কের দিক দিয়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমার মনে হয় না… হবে কিনা সেটা ডিপেন্ডেন্স অন ইউএসএস, ওরা বলতে পারে। তবে এইটুকু বলি যে দেশগুলো উন্নতি করে, যে দেশের সরকার অনেক ভালো কাজ করে, অনেক সময় তাদের উপর আক্রমণ হয়। আপনি ভালো কাজ করলে তখন সমস্যা হয়।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বরাবরই সমালাচনার মুখে থাকা র‌্যাবকে নিয়ে মোমেন বলেন, যেটার কারণে এদেশে সন্ত্রাস নাই, যার কারণে বাংলাদেশি লোকেরা সন্ত্রাসবিহীন বাংলাদেশে থাকে, যার কারণে অনেকজনের অপকর্ম দূর হয়। এবং বাংলাদেশের জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের ওপর যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস আছে।

সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কারণ কী- প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু কিছু এনজিও আর কিছু হিউম্যান রাইটস গ্রুপ ওদের (র‌্যাবের) বিরুদ্ধে নাকি অভিযোগ করেছেন। তার প্রেক্ষিতে এবং তারা নিজেরাও এনালাইসিস করে..

যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকাতে প্রতিবছর ছয় লক্ষ লোক নিখোঁজ হয় এবং এরা কিভাবে নিখোঁজ হয়, আমেরিকান সরকার জানে না। আর প্রতিবছর পুলিশ হাজার খানেক লোক মেরে ফেলে। আমেরিকাতে এই যে ছয় লক্ষ লোক নিখোঁজ হয়, তার জন্য কোনো অথরিটি, হেড অব অথরিটি, তাদের তো কোনো শাস্তি হয় না। এগুলো হয়ত লোক দেখানো একটা অপচেষ্টা, কারণ সব দেশেই কিছু লোক নিখোঁজ হয়, আমেরিকা তো বললাম, এবং হাজার হাজার লোকের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে নাকি ১০ বছরে এই ৬০০ জন, এই র‌্যাব নাকি মেরেছে। কাকে মেরেছে, তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা একটা বলে দেন ‘ওইখানে’। আমরা আশা করব, তাদের মোর ফ্যাক্ট বেইজড হওয়া উচিৎ।